মাহে রমজানের ফজিলত


রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ রহমত স্বরূপ। কোরআন এবং হাদীসে এই রমজান সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
প্রতিটি সক্ষম মুসলমান নর-নারীর ওপর এই মাসে রোজা বা সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, একই সঙ্গে এর অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে কোরআন ও হাদীসে।
এক রেওয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, রোজাদারের পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ পাক প্রদান করবেন। অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ।
এই রমজান মাস আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার জন্য রহমত, বরকত ও মাগফেরাত হিসেবে অভির্ভূত হয়।
হাদীস শরীফে (সহীহ বোখারী, সহীহ তিরমিযি, ইমাম হাম্বলী, ইবনে কাসীর, প্রভৃতি) বর্ণিত রয়েছে, বিশেষ করে সাহাবী ক্কাআব বিন ঊজাইর রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার জুমার খুৎবা দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন, তখন বলেন আমীন, দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখেন, তখন বলেন আমীন, একইভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বলেন, আমীন।
নামায শেষে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহকে (সা.) তিনবার অস্বাভাবিকভাবে আমীন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিব্রাইল আলাইহিসসাল্লাম (আ.) ওহী নিয়ে আসেন এবং বলেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সেই ব্যক্তি, যে রমজান মাসের রোজা পেল অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, এর জবাবে আমি বললাম আমীন।
দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো অথচ দরুদ শরীফ পড়ল না, জবাবে বলেছি আমীন।
তৃতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখলাম, জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যে বা যারা তার মা-বাবা কিংবা উভয়ের যে কোনো একজনকে পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না, জবাবে বলেছি আমীন।
এই হাদীসের শুরুতেই বলা হয়েছে রমজান শরীফের কথা। রমজান মাস যখন শুরু হয়, তখন আল্লাহ পাক এই মাসের প্রথম রাতেই দশ লক্ষ বান্দাকে মাফ করে দেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে রয়েছে, এমন সব গুণাহগারদের মাফ করে দেন, লাইলাতুল কদরের রাতে অসংখ্য, অগণিত বান্দাকে মাফ করে দেন, আর মাসের ২৯ তারিখ রাতে সারা মাসের যত মাফ করা হয়েছে তার দ্বিগুণ, আর ঈদের রাতে আরো দ্বিগুণ সংখ্যক বান্দার গূনাহ মাফ করে দেন বলে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। তবে কবীরা গূনাহের জন্য তওবা করে মাফ চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু (রা.) থেকে বর্ণিত, যে বা যারা পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সঙ্গে রমজান মাসে দিনের বেলা যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকবে অর্থাৎ রোজা রাখবে ও রাতে পরিপূর্ণ ঈমানের সঙ্গে নামায পড়বে, এবাদত-বন্দেগী করবে, লাইলাতুল কদরের রাতে জেগে এবাদত করবে, আল্লাহ পাক সে বান্দার পেছনের সব গূনাহ মাফ করে দেবেন।
সহীহ বোখারী ও মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এই হাদীসের সত্যতা নির্ভুলভাবে পাওয়া যায়।
হযরত আবু হুরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু (রা.) আরো বর্ণনা করেছেন, রমজান মাসে বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তালাবদ্ধ করে রাখা হয় শয়তান ও জিনদের। রমজানের প্রতিটি দিন ও রাতে অগণিত বান্দাকে আল্লাহ পাক দোজখের আজাব থেকে মাফ করে দিতে থাকেন।
এই রমজান মাসে কেউ রোজাদারকে এক ফোঁটা দুধ, পানি বা খেজুর অথবা যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ইফতার করালে আল্লাহ পাক তাকে দোজখের আযাব থেকে মাফ করে দেবেন, আল্লাহ পাক তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব দেবেন। তবে রোজাদারের সওয়াব থেকে সামান্যও কমানো হবে না।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) বলেছেন, মাগফেরাতের দোয়া রমজানের শেষ রাতে কবুল হয়েছে, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলে ওই রাত লাইলাতুল কদরের রাত কিনা জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, না, কারণ আল্লাহ পাক তার বান্দার মজুরি রমজান পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেন। বলাই বাহুল্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নির্মল ও নেকশ্রেষ্ঠ নবী হওয়া সত্ত্বেও রমজানে আল্লাহর দরবারে এতো এবাদত বন্দেগী করেছেন, আর আমরা তো তার উম্মত, আমাদেরও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বেশি বেশি এবাদত-বন্দেগী করা উচিৎ।
রমজান মাসের প্রতিটি সময়, প্রতিটি ক্ষণ অত্যন্ত মূল্যবান। অন্য যে কোনো মাসে যেমন নির্দিষ্ট সময় বা শেষ রাতে বা তাহাজ্জুদের সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু রমজান মাসে প্রতিটি সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দিনে-রাতে আল্লাহ পাক তার রহমতের দরজা খুলে বান্দার নিকটবর্তী হয়ে গূনাহগার বান্দাদের মাফ করে দিচ্ছেন এবং তা চলতে থাকবে অনবরত একেবারে ঈদের রাত পর্যন্ত।
এই রমজান মাসে শেষ দশ দিনের মধ্যে যেকোনো বেজোড় রাত লাইলাতুল কদরের রাত বলে কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যা হাজার মাসের এবাদত-বন্দেগীর চাইতে উত্তম রাত।
তাই আমাদের সবার কদরের রাতসহ রমজান মাসের প্রতিটি ক্ষণ ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো উচিৎ। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ রহমত স্বরূপ। কোরআন এবং হাদীসে এই রমজান সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
প্রতিটি সক্ষম মুসলমান নর-নারীর ওপর এই রোজা বা সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, একই সঙ্গে এর অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে কোরআন ও হাদীসে।
এক রেওয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, রোজাদারের পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ পাক প্রদান করবেন। অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ।
পুরো রমজান মাসের প্রতিটি দিনে অসংখ্য ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে হাদীসে। এর মধ্যে শেষ দশদিন এতেকাফের ফজিলত হাদীস শরীফে অসংখ্যবার আলোকপাত করা হয়েছে, এতেকাফের ফলে সব চাইতে যে মূল্যবান লাভ হয়, তা হলো বান্দা যেমন এবাদত-বন্দেগী করে তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, একই সঙ্গে লাইলাতুল কদরের রাত ভাগ্যে জোটে। কারণ এতেকাফে সারাক্ষণ মসজিদে থাকার ফলে এই সৌভাগ্যের রজনী জুটে থাকে, এতে বান্দা সারাক্ষণ এবাদতের মর্যাদা পেয়ে থাকে।
কদরের রাতে এবাদত-বন্দেগীর অফুরন্ত ফজিলত বহু বইয়ে উলামায়ে কেরামগণ হাদীসের বই থেকে আলোকপাত করেছেন, তা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। একাগ্র চিত্তে এই রাতে এবাদত করলে বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন আল্লাহ পাক। হাজার মাসের এবাদতের চাইতে এই রাতের এবাদতের মর্যাদা সর্বোচ্চ।
বলা যায়, আল্লাহ পাক রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতদের আগের নবী-রাসূলদের উম্মতের তুলনায় এক রাতের নফল এবাদতের সঙ্গে তখনকার উম্মতদের শত-হাজারো বছরের এবাদত বন্দেগীর ওপরে অধিক মর্যাদা দিয়েছেন। সূরা দোখান এবং সূরা কদরের বর্ণনা থেকে এই রাতের বিশেষ মাহাত্ম্য প্রতিফলিত হয়।
এই রমজান মাসেই কোরআন শরীফ নাযিল হয়েছিল। সুতরাং আমাদের সবার উচিৎ রমজানে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করা। যারা কোরআন পড়তে পারেন না তাদের উচিৎ মসজিদ, মক্তব বা মাদ্রাসার ইমাম বা যারা সঠিকভাবে কোরআন পড়তে জানেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোরআন তেলাওয়াত শিখে নেওয়া।
যাদের হাতে সময় অল্প, বিভিন্ন প্রফেশনাল ও পারিবারিক কারণে ব্যস্ত, তাদেরও উচিৎ অন্তত দিন বা রাতের কিছুটা সময় হলেও কোরআন তেলাওয়াত করা, একান্ত অপারগ হলে অন্তত সূরা ইয়াসিন, সূরা দোখান, সূরা মূলক, সূরা কাহফ এইসব ফজিলতপূর্ণ সূরা তেলাওয়াত করা।
সূরা ইয়াসিনকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র কোরআনের সারাংশ বলেছেন এবং তা তেলাওয়াতে মাগফিরাত লাভ হয়ে থাকে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। (মসনূদ ইমান,পৃষ্টা নং ২৮৬, ভলিউম-৭, হাদীস ২০৩২২- এ)
সূরা মূলক পাঠে যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। আবূ হুরাইরা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহু (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা.) বলেছেন, কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন রয়েছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। (আবূ দাউদ ১৪০০)
সূরা দোখান রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার পেছনের গোনাহ মাফ করে দেন। জামে তিরমিযির পৃষ্টা নম্বর ৪০৬ এর ভলিউম নম্বর ০৪ এর ২৮৯৭ নম্বর হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কেউ সূরা দোখান যে কোনো রাতে পড়লে ৭০,০০০ ফেরেশতা অনবরত তার মুক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন। একই কিতাবের ৪০৭ নম্বর পাতায় ২৮৯৮ নম্বর হাদীস থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে অর্থাৎ সোবে জুমা বারে এই সূরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন।
রমজান মাসে যে কোনো এবাদতের কয়েকগুণ সওয়াব রয়েছে। অন্য যে কোনো মাসের নফল এবাদতের চেয়ে রমজান মাসে এক রাকাত নফল এবাদতের ৭০ গুণ সওয়াবের কথা হাদীসে বলা হয়েছে, অন্য যে কোনো মাসের ফরজ এক রাকাতের ৭০০ গুণ সওয়াব প্রদানের কথা বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো রেওয়াতে এক রাকাতের বদলে ১৭০০ রাকাতের সওয়াবের উল্লেখ রয়েছে। সব চাইতে বড় কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘‘রোজা আমারই জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।’’
পবিত্র তিরমিয শরীফে সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রোজাদারের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন। আয়েশা রাজি আল্লাহু তাআলা আনহুমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাস এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত, রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দোয়া করতেন, নামায পড়তেন, কোরান তেলাওয়াত করতেন।

মহান আল্লাহ রমজান মাসকে বহুবিধ ফজিলতের জন্য নির্বাচিত করেছেন। অনেক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে তিনি রমজানকে বিশেষ স্বাতন্ত্র দান করেছেন। যে কারণে রমজান মাস অন্যান্য মাসের মাঝে অনন্য। বিবিধ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{شهر رمضان الذي أنزل فيه القرآن هدى للناس وبينات من الهدى والفرقان فمن شهد منكم الشهر فليصمه ومن كان مريضا أو على سفر فعدة من أيام أخر} [البقرة 185].
রমজান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থ্যক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
সামান্য চিন্তা করলেই আমরা দেখতে পাব যে মহা মহিম আল্লাহ এ আয়াতে রমজান মাসের দুটি মহান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
প্রথম বৈশিষ্ট্য:
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে হেদায়াতের জন্য নাযিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। এ মহান কিতাবের মাধ্যমে মানবজাতিকে হক ও বাতিল পরিদৃষ্ট করানো হয়েছে। তাতে রয়েছে মানবজাতির সার্বিক উপকারিতা ও কল্যাণ। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক নির্ভুল সফলতার সঠিক দিক নির্দেশনা। আর এ বিশেষ নিয়ামত দানের জন্য তিনি নির্বাচন করেছেন রমজান মাসকে।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য:
উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার ওপর বহু ফজিলতপূর্ণ রোজার মত মহা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আবশ্যিক করা হয়েছে এ মাসেই। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে নির্দেশ জারি করে বলেন,
{فمن شهد منكم الشهر فليصمه} [البقرة 185].
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালনকরে।
{সূরা বাকারা : ১৮৫}
রমজানের রোজা ইসলামের অন্যতম একটি রোকন। আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ-বিধান। এ বিধান কেউ অস্বীকার করলে কাফের বলে বিবেচিত হবে। সুস্থ ও মুকিম তথা নিজ বাড়িতে অবস্থানকারী ব্যক্তির ওপর এ মাসের রোজা পালন করা আবশ্যিক। আল্লাহ বলেন,
{فمن شهد منكم الشهر فليصمه ومن كان مريضا أو على سفر فعدة من أيام أخر } [البقرة 185].
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নিবে। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
আয়াতের মাধ্যমে পরিস্কার হল যে, রমজানের রোজা থেকে কারো পরিত্রাণ নেই। হয়তো আদায় করতে হবে নয়তো কাজা। তবে একান্ত বৃদ্ধ ও সুস্থতার আশা নেই এমন অসুস্থ ব্যক্তি -যারা কাজা বা আদায় উভয়েই অক্ষম- তারা এর ব্যতিক্রম। তাদের বিধান সম্বন্ধে খানিক পর আলোচনা হবে ইনশাল্লাহ।
এ মাসের মর্যাদা সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “إذا جاء رمضان فُتحت أبواب الجنة وغُلّقت أبواب النار وصُفدت الشياطين” [أخرجه البخاري 1898، 1899، ومسلم 1079].
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজান আসলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানদের বন্দি করে নেওয়া হয়। (বোখারী ১৮৯৮ ও মুসলিম ১০৭৯)
হাদিসটি বরকতময় এ মহান মাসের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছে,
এক.
এ মাসে জান্নাতের সবগুলো দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কারণ, নেক আমল যা জান্নাতে প্রবেশের উপলক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত, এ মাসেই তা অধিক পরিমাণে সম্পাদন করা হয়। । যেমন আল্লাহ বলেন,
 {ادخلوا الجنة بما كنتم تعملون} [النحل 32].
তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ কর। (নাহল:৩২)
দুই.
এ মাসে জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, জাহান্নামে প্রবেশের কারণ গুনাহ ও অবাধ্যতার কাজ এ মাসে হ্রাস পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
: {فأما من طغى * وآثر الحياة الدنيا * فإن الجحيم هي المأوى} [النازعات 37 ـ 39 ]
সুতরাং যে সীমালঙ্ঘন করে, আর দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়, নিশ্চয় জাহান্নাম হবে তার আবাসস্থল। (নাযিআত:৩৭-৩৯)
অন্যত্র বলেন,
{ومن يعص الله ورسوله فإن له نار جهنم خالدين فيها أبدا} [الجن: 23].
আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। (সূরা জিন: ২৩)
তিন.
এ মাসে শয়তানদের বন্দি করে নেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য মাসের ন্যায় রমজানে তারা মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে প্রতারিত করতে পারে না। নেক কাজ থেকে সরিয়ে অন্যায় ও পাপ কাজে লিপ্ত করতে পারে না। এ মুবারক মাসে তাদেরকে বন্দি করে মূলত: মুসলমানদের উপর দয়া করা হয়, আল্লাহর করুণার দ্বার অবারিত করে দেওয়া হয়। যাতে তারা অধিক পরিমাণে নেক কাজ করতে পারে। এবং পূর্বে কৃত মন্দকাজের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে।
এ মাসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এ মাসে সম্পাদিত নফল অন্য মাসের ফরজের সমান। আর একটি ফরজ অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান। এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করালে, গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এবং রোজাদারের সাওয়াব একটুও হ্রাস না করে সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে প্রদান করা হয়।
এগুলো সবই কল্যাণ, বরকত ও সুযোগ, যা এ মাসের আগমনের সাথে সাথে মুসলমানদের দ্বারে এসে উপস্থিত হয়। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত একে একান্ত আনন্দচিত্তে গ্রহণ করা। আমলের ব্যাপারে পারস্পরিক ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। এ সুযোগ প্রাপ্তির জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। তাঁর প্রশংসা করা। অধিক পরিমাণে নেক কাজ সম্পাদন করে লাভবান হবার তাওফিক চাওয়া। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। নিশ্চয় এটি একটি মহান মাস। মর্যাদাপূর্ণ মৌসুম। মহান আল্লাহর পক্ষ হতে উম্মতে ইসলামিয়ার জন্য বহু বরকত ও কল্যাণময় দান।
হে আল্লাহ আমাদেরকে এর বরকত পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করার তাওফিক দান কর। তা থেকে লাভবান হতে সাহায্য কর। তুমিইতো শ্রোতা ও জবাব দাতা। সকল প্রশংসা তোমারই, হে বিশ্ব জগতের মহান প্রতিপালক।
চতুর্থ পাঠরমজানের মূল্যবান মুহূর্তগুলো কি কি কাজে ব্যয় করা উচিৎ
পূর্বেই আলোচনা হয়েছে, এ মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার জন্য মহান আল্লাহ এ মাসকে নির্ধারণ করেছেন। এ মাস কল্যাণ ও বরকতের মৌসুম। নেক আমল সম্পাদনের মৌসুম।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান পাবার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। রজব মাস আসলে তিনি এ বলে দোয়া করতেন।
: “اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان”
[ أخرجه البيهقي في شعب الايمان 7/398 رقم 3534، والبزار في مسنده 1/294ـ295 رقم 616 ـ كشف الأستار، وأبو نعيم في الحلية 6/269، وابن عساكر كما في كنز العمال رقم 18049 وضعفه الألباني في ضعيف الجامع رقم 4395 وكذا ضعفه محقق الشعب].
‘অর্থাৎ, ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌হে আল্লাহ রজব ও শাবানকে আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।,
(বাইহাকি/শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫৩৪, বাযযার/মুসনাদ ৬১৬, প্রমূখ। আল্লামা আলবানি রহ. এ হাদিসকে জয়ীফ বলে মন্তব্য করেছেন, জয়ীফ আল-জামে হাদিস নং ৩৯৫ )
নবীজী নিজ সাহাবাদেরকে এ মাসের আগমনে সুসংবাদ প্রদান করতেন এবং তাদেরকে এর বৈশিষ্ট্যাবলি বর্ণনা করে শুনাতেন। বলতেন,
“أيها الناس قد أظلكم شهر عظيم مبارك”
অর্থাৎ, হে লোক সকল! এক মহান বরকতময় মাস তোমাদের উপর ছায়া ফেলেছে।
[فعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "أتاكم رمضان شهر مبارك، فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم"  أخرجه أحمد 2/230، 425 وعبد بن حميد في المنتخب رقم 1429 والنسائي 4 / 129]..
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌তোমাদের নিকট রমজান এসেছে, বরকতময় এক মাস। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এর রোজা ফরজ করছেন। এ মাসে আকাশের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের সবক’টি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুষ্ট-অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এতে রয়েছে এমন এক রজনী, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয় সে (সর্বৈবভাবে) বঞ্চিত হয়। {বর্ণনায় আহমাদ২/২৩০, আব্দ বিন হুমায়দ, আল-মুন্তাখাব ১৪২৯ এবং নাসায়ী ৪/১২৯}
তিনি তাদেরকে এ মাসে ফরজ কিংবা নফল- সালাত, দান-সদকা, সৎ কাজ, দয়া-অনুগ্রহ, আল্লাহর ইবাদতে ধৈর্য্য ধারণ ইত্যাদি নেক আমল সম্পাদনে শ্রম ব্যয়ে উৎসাহ প্রদান করতেন। আরো উৎসাহ দিতেন মাসের দিবসগুলো রোজার মাধ্যমে আর রজনীগুলো কিয়ামের মাধ্যমে আবাদ করতে। প্রতিটি মুহূর্ত কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহ জিকিরে অতিবাহিত করতে।
সুতরাং শ্রদ্ধেয় পাঠক বৃন্দের নিকট আকুল আবেদন, এ মহিমান্বিত মাসকে উদাসীনতা ও উপেক্ষার মাধ্যমে নষ্ট করা হতে বিরত থাকুন। যেমনটি করে থাকে আত্মপ্রবঞ্চিত, দুর্ভাগা মানুষগুলো। যারা আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কারণে আল্লাহ তাদেরকে তাদের নিজেদের সম্পর্কেই ভুলিয়ে দিয়েছেন। তাইতো কল্যাণকর মৌসুম অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু তারা কোনোভাবে উপকৃত হতে পারে না। এর কোনো মূল্য, কোনো মর্যাদাই তারা জানে না।
বহু মানুষ আছে যারা এ মাসকে কেবল ভাল খাবারের মাস হিসাবে জ্ঞান করে থাকে। তাই নিজ চাহিদা পূরণে চেষ্টার ত্রুটি করে না। উন্নত খাদ্য-খাবার, উৎকৃষ্ট সব পানীয় জোগাড়ই তাদের মূখ্য কাজ হয়ে দাড়ায়। অথচ কে না জানে, অধিক পানাহার ইবাদতে বিঘ্নতার সৃষ্টি করে। প্রতিটি মুসলমানের নিকট শরিয়তের দাবিও হচ্ছে, পানাহার যতদূর সম্ভব কম করা যাতে ইবাদতের উদ্যম সৃষ্টি হয়। অধিকহারে ইবাদত করা যায়।
আবার কিছু মানুষ আছে যারা মাহে রমজানকে দিনে ঘুমানো আর রাতে জাগ্রত থাকার মাস হিসাবে জ্ঞান করে থাকে। ফলে দিনের বেলা ঘুমিয়ে কাটায় আর রাত অতিবাহিত করে অহেতুক ও ক্ষতিকর সব কাজে। সারা রাত জাগ্রত থাকার ফলে পূর্ণ দিন ঘুমোয়। জামাত বরং সময় মত নামাজের পর্যন্ত গুরুত্ব থাকে না।
কেউ কেউ আছে, রকমারী সব খাদ্য-খাবার নিয়ে ইফতার করতে বসে আর জামাতের সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করার কথা খেয়াল থাকে না বরং সে দিকে কোনো গুরুত্বই থাকে না।
এসব মানুষের কাছে মাহে রমজানের কোনো গুরুত্ব নেই। করণীয় কর্তব্যে অবহেলা ও অবৈধ কাজ সম্পাদন করে এ মাসের সম্মানহানি হতে বাঁচার কোনো তাগিদই তাদের নেই। এরা রমজানকে কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যের মৌসুম হিসাবেই দেখে থাকে। সম্পদ আহরণ ও পার্থিব ঐশ্বর্য্য কামানোর মোক্ষম সুযোগ হিসাবেই বিবেচনা করে। ফলে কেনা-বেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মসজিদ ছেড়ে বাজারকেই ঠিকানা হিসাবে বেচে নেয়। মসজিদে যদি যায়ও কিন্তু খুব তাড়াহুড়া করে। মোটেও অপেক্ষা করতে চায় না। কারণ বাজারেই তারা হৃদয় তরীর নোঙ্গর ফেলেছে। সেখানেই তাদের আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে।
এমনও কিছু মানুষ আছে রমজান মাস যাদের নিকট মসজিদ, হাট-বাজার রাস্তা-ঘাটসহ জন সমাগমের স্থানসমূহে ভিক্ষাবৃত্তির মাস বলে পরিগণিত। ফলে তারা এ মাসকে অতিবাহিত করে এখানে সেখানে যাওয়া-আসা, এ শহর থেকে অন্য শহরে সফর এবং এ স্থান থেকে ঐ স্থানে ছুটাছুটি করে ভিক্ষাবৃত্তি ও সম্পদ আহরণের ধান্ধায়। তারা মূলত: অভাবহীন এবং সুস্থ সবল। কিন্তু মানুষের কাছে নিজেদেরকে উপস্থাপন করে দরিদ্র-অভাবী, সহায়-সম্বলহীনরূপে। আল্লাহ প্রদত্ত সুস্থতা ও অভাবহীনতার মত অমূল্য নিয়ামত অস্বীকার করে তারা সম্পদ আহরণ করে অনুনোমোদিত ও অবৈধ পন্থায়। মহা মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করে মহা ক্ষতিকর কাজে । এ শ্রেণীর লোকের কাছে রমজানের কোনো মূল্য ও বৈশিষ্ট্যই অবশিষ্ট থাকে না।
হে আল্লাহর বান্দাবৃন্দ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী সম্বন্ধে কম-বেশি আমাদের সকলেরই জানা আছে। সমস্ত সৃষ্টিকুলের মাঝে আল্লাহর সর্বাধিক ইবাদত সম্পাদনকারী ব্যক্তি নি:সন্দেহে তিনিই। সারা বছর প্রতিটি মুহূর্ত তিনি মহা মহিমের ইবাদতে কাটাতেন। ইবাদতই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান কাজ। তা সত্ত্বেও রমজান মাসে তিনি অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক প্ররিশ্রম করতেন। নিবিষ্ট মতে ইবাদতের জন্য এ মাসে অন্যসব ব্যস্ততা কমিয়ে দিতেন যা মূলত: ইবাদতই ছিল। উত্তম কাজ হতে অবসর হয়ে অতি উত্তম কাজে মনোনিবেশের উদ্দেশেই এমনটি করতেন।
সালাফে সালেহীনরাও নবী আদর্শের অনুবর্তিতায় আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মাওলা সুবহানাহুর সান্নিধ্য-সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত-আনুগত্যে এ মাসকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। নেক আমল সম্পাদনের লক্ষ্যে অন্যান্য ব্যস্ততা কমিয়ে দিতেন। রাতগুলো তাহাজ্জুদ আর দিনগুলো রোজা, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে আবাদ করতেন। এসব আমলের মাধ্যমে মসজিদগুলো থাকত সদা সজীব। প্রতিটি স্থান হতে রাহমানুর রাহীমের জিকিরের গুঞ্জরণ প্রতিধ্বনিত হত। এ যেন নির্মল এক বেহেস্তি পরিবেশ।
তাদের সাথে আমরা আমাদের অবস্থা একটু তুলনা করে দেখিতো। এ মাস সম্বন্ধে আমাদের অনুভূতি কি? কত টুকু নাড়া দিতে পেরেছে আমাদেরকে এ মাস?
সম্মানিত ভ্রাতৃবৃন্দ! এ মাসে নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেওয়া হয় ঠিক। একইভাবে পাপকাজের শাস্তিও কিন্তু কঠিন করে দেওয়া হয়। সুতরাং আমাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ। সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ তাঁর নিদর্শনসমূহকে।
{ومن يعظم حرمات الله فهو خير له عند ربه} [الحج 30].
আর কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র বিষয়সমূহকে সম্মান করলে তার রবের নিকট তা-ই তার জন্য উত্তম। (সূরা হাজ, আয়াত ৩০)
আল্লাহ আমাদের সকলকে নেক কথা ও কাজে ব্যস্ত হবার তাওফিক দান করুন। শত কোটি দরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
পঞ্চম পাঠরোজার শুরু ও শেষ সময়
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{أحل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم هن لباس لكم وأنتم لباس لهن علم الله أنكم كنتم تختانون أنفسكم فتاب عليكم وعفا عنكم فالآن باشروهن وابتغوا ما كتب الله لكم وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر ثم أتموا الصيام إلى الليل} [البقرة 187].
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। {সূরা বাকারা:১৮৭}
আল্লাহ তাআলা আয়াতটিতে রোজার শুরু ও শেষ সময় সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। এতই সুস্পষ্ট যে প্রতিটি মানুষ অতি সহজে বুঝতে পারবে। রোজা শুরু হবে সুবহে সাদিক উদিত হলে আর শেষ হবে সূর্য অস্ত গেলে। অন্যভাবে বললে, রোজার শুরু সময় হচ্ছে, সুবহে সাদিক উদিত হওয়া আর শেষ সময় সূর্য অস্ত যাওয়া। যেমনি করে তিনি রোজার মাসের সূচনা সময়টিও নির্ধারণ করেছেন প্রতিটি মানুষের বোধগম্য করে খুবই স্পষ্ট নির্ধারণীর মাধ্যমে। আর তা হচ্ছে, চাঁদ দেখা যাওয়া কিংবা পূর্ববর্তী শাবান মাসকে ত্রিশ দিনে পূর্ণ করা। আমাদের দ্বীন-ইসলাম আসলেই একটি সহজ ও বোধগম্য দ্বীন। সকল শ্রেণীর সকল পেশার মানুষই তা অনায়াসে পালন করতে পারে।
{وما جعل عليكم في الدين من حرج} [الحج 78]
দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। {সূরা হজ্:৭৮}
সুতরাং সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। একটি উল্লেখ যোগ্য সময় পর্যন্ত রোজা অতি দীর্ঘ থাকার পর এ সহজীকরণ আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের জন্য (বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ) বিধিত হয়েছে ।
ইমাম বোখারি রহ. বারা রা. থেকে উদ্ধৃত করেছেন,
كان أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم إذا كان الرجل صائما فحضر الإفطار فنام قبل أن يفطر لم يأكل ليلته ولا يومه حتى يمسي، وأن قيس بن صرمة الأنصاري كان صائما، وفي رواية كان يعمل في النخيل بالنهار وكان صائما، فلما حضر الإفطار أتى امرأته فقال لها: أعندك طعام، قالت له: لا ولكن أنطلق فأطلب لك، وكان يومه يعمل، فغلبته عيناه فجاءته امرأته فلما رأته قالت: خيبة لك أنمت؟ فلما انتصف النهار غشي عليه فذكر ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم، فنزلت هذه الآية: {أحل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم} [البقرة 187] ففرحوا فرحا شديدا، ونزلت: {وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر} [البقرة 187] [أخرجه البخاري رقم 1915].
অর্থাৎ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের অবস্থা ছিল যখন তাদের কেউ রোজা রাখতেন আর ইফতার করার পূর্বেই ঘুমিয়ে যেতেন, তখন তিনি সে রাত ও পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতেন। কায়স বিন সিরমাহ নামক জনৈক আনসারি রোজা ছিলেন। কোনো কোনো রেওয়ায়াতে এসেছে, তিনি দিনের বেলায় খেজুর বাগানে কাজ করতেন। ইফতারের সময় হলে তিনি স্ত্রীর নিকট এসে খাবার চেয়ে বললেন, তোমার নিকট কোনো খাবার আছে কি? স্ত্রী বললেন: না, তবে তালাশ করে দেখি কিছু পাই কি না? তিনি দিনে কাজ করেছেন, তাই ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন। স্ত্রী ফিরে এসে তাকে (ঘুমন্ত) দেখতে পেয়ে বললেন, আ-হা-রে… ঘুমিয়ে গেলেন? পরদিন দুপুরে তিনি বেহুশ হয়ে পড়লেন। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়, {أحل لكم ليلة الصيام الرفث إلى نسائكم} [البقرة 187] অর্থাৎ, সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। {বাকারা:১৮৭} এতে সাহাবারা খুবই আনন্দিত হলেন। আরো নাযিল হল,
{وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الأبيض من الخيط الأسود من الفجر} [البقرة 187]
আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। {সূরা বাকারা:১৮৭} {বোখারি:১৯১৫}

বোখারিতেই বারা রা. থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রমজানের রোজার বিধান নাযিল হলে লোকেরা পূর্ণ রমজান মাস স্ত্রীদের নিকটবর্তী হতো না। তবে কিছু লোক এ ব্যাপারে নিজেদের সাথে খিয়ানতে প্রবৃত্ত হলেন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন,
{علم الله أنكم كنتم تختانون أنفسكم فتاب الله عليكم وعفا عنكم} [البقرة 187]
আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। [সূরা বাকারা:১৮৭], {বোখারি:৪৫০৮}
خان واختان এর অর্থ একই। অর্থাৎ, তোমরা রোজার রাত্রিতে মেলা-মেশার মাধ্যমে নিজেদের সাথে খেয়ানত করতে। এরপর তোমাদের তাওবা করার পূর্বেই আল্লাহ তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ অপরাধে তোমাদের পাকড়াও করেননি। বরং ব্যাপারটি খুবই সহজ করে দিয়েছেন। সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সুবহে সাদিক উদিত হওয়া অবধি পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ করে দিয়েছেন। এখন থেকে সুবহে সাদিক হতে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপরি উক্ত তিন বস্তু (খাওয়া, পান করা ও স্ত্রী সহবাস) ও রোজা পরিপন্থী বিষয়গুলো থেকে রোজাদার বিরত থাকলেই চলবে।
কারণ আল্লাহ বলছেন, {ثم أتموا الصيام إلى الليل} [البقرة 187]অত:পর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।
তাই সূর্যাস্ত নিশ্চিত হয়ে রাত শুরু হবার সাথে সাথে রোজা শেষ হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
: “إذا أقبل الليل من ههنا وأدبر النهار من ههنا وغربت الشمس فقد أفطر الصائم” [أخرجه البخاري رقم 1954 ومسلم رقم 1100].
যখন রাত এ দিক হতে আসে, দিন এ দিক হতে যায় আর সূর্য অস্ত যায় তখন রোজাদারের ইফতার হয়ে যায়। [ বোখারি ১৯৫৪ ও মুসলিম ১১০০]
কিছু লোক ইফতার ও সেহরি বিষয়ে শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে। তাদের একদল বরং বলতে গেলে অনেকেই রাত জাগরণ করে, রাতের শেষ ভাগে এসে ঘুমানোর ইচ্ছা হলে ফজরের পূর্বে সেহরি খেয়ে নেয়। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে আর ফজরের নামাজ সময়মত জামাতে পড়া হয় না। এর মাধ্যমে তারা অনেকগুলো ভুল-ভ্রান্তির শিকার হয়।
এক. তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই রোজা পালন শুরু করে।
দুই. জামাতের সাথে ফজরের নামাজ ছেড়ে দেয়।
তিন. নামাজ সময় মত আদায় করে না। বরং ঘুম ভাঙ্গার পর আদায় করে। এতে করে কখনো কখনো জোহরের সময় হয়ে যায়।
কিছু কিছু বেদআতি সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে (সময় মত) ইফতার না করে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করে।


ষষ্ঠ পাঠ রোজার নিয়ত করার বিধান
রোজার নিয়ত করা জরুরি এতে কোন সন্দেহ নেই।  প্রতিটি ইবাদতে যেমন নিয়ত করা শর্ত তেমনি রোজাতেও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। নিয়ত ছাড়া রোজা সহীহ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন -
“إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى”
নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল আর প্রতিটি ব্যক্তিই যা নিয়ত করে তাই সে পায়।
নিয়তের পদ্ধতি : রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় অন্তরে উপস্থাপন করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথাব ক্বাজা রোজা রাখছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ রাখছি।
নিয়ত করার সময়: যে প্রকারের রোজাই হোক না কেন নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। রাতের প্রথম অংশে হতে পারে, মাঝের অংশে হতে পারে অথবা শেষাংশেও হতে পারে। ‍‍‍‍‍‍‍‍‍
আয়েশা রা. হতে মারফু হাদিস বর্ণিত -যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না। ( দারা কুতনি : ১৭২/২, বাইহাকি ২০২/৪ তিনি বলেন হাদিসটির সকল বর্ণনা কারিই নির্ভরযোগ্য)
ইবনে ওমর রা. হাফসা রা. হতে এবং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“من لم يبت الصيام قبل الفجر فلا صيام له”
 যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজা রাখা স্থির করে না তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।( আহমাদ ২৮৭/৬, তিরমিজি ৭৩০ আবু দাউদ ২৪৫৪)

এ ছাড়া রোজা সাধারণত: দিন ব্যাপিই হয়ে থাকে এবং পূর্ণ দিন রোজা রাখাই হলো ওয়াজিব। এখন যদি দিনের কিছু অংশ রোজার নিয়ত করা ছাড়া অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন এ কথা বলা সহীহ হবে না যে, লোকটি পূর্ণ দিন রোজা রেখেছে। কারণ, নিয়ত কখনো যা অতিবাহিত হয়েছে তাকে ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত করতে পারে না। যখন থেকে নিয়ত করে তখন থেকেই তার কার্যকারিতা শুরু বলে বিবেচিত হয়।
নিয়তের স্থান হল মানুষের অন্তর। সকল ইবাদতের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। সুতরাং নিয়ত অন্তরেই করবে, মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। মুখে উচ্চারণ করা বরং শরিয়ত পরিপন্থি। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিদের কারো থেকে এ ধরনের কোন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, তারা কখনো বলেছেন نويت أن أصوم বা نويت أن أصلي ইত্যাদি। সুতরাং নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত । রোজার নিয়তে সেহর- ইফতার খাওয়াই যথেষ্ট। এতে রোজা আদায় হয়ে যাবে।
শায়খ তকি উদ্দিন ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‍‍‌রোজাদার যখন রাতের খাবার খায় রোজা রাখার ইচ্ছায়ই খায়। এ কারেণইতো রমজানের রাতের খাওয়া এবং ঈদের রাতের খাওয়ার মধ্যে প্রার্থক্য করে। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি জানতে পারে যে, আগামি কাল রমজান এবং সে রোজা রাখার ইচ্ছা করে, এতেই তার নিয়ত হয়ে যায়। আলাদাভাবে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের আমল এ রকমই চলে আসছে।,
নফল রোজার নিয়ত: নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায়ও করা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থি কোন কাজ যথা খাওয়া পান করা ইত্যাদি তার থেকে সংঘটিত হতে পারবে না। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত,
“دخل عليَّ النبي صلى الله عليه ذات يوم فقال “هل عندكم من شيء ؟” فقلنا: لا، قال “فإني إذاً صائم” رواه الجماعة إلا البخاري، [أخرجه مسلم رقم 1154].
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করে বললেন, তোমার নিকট খাওয়ার কোন কিছু আছে কি? আমরা বললাম: না,  তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম।
(হাদিসটি ইমাম বুখারি ছাড়া সবাই বর্ণনা করেছেন। ( মুসলিম, হাদিস নং – ১১৫২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাবার চাওয়া দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি ইতি পূর্ব হতে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। আর তাঁর  “فإني إذا صائم”  বলা প্রমাণ করে, তিনি রোজা আরম্ভ করেছেন দিনের বেলা হতে। এতে বুঝা যায় নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলা করলেও চলবে। সুতরাং এ হাদিসটি পূর্বে উল্লেখিত হাদিস-
 ”من لم يبت الصيام قبل طلوع الفجر فلا صيام له”
জন্য খাসকারী। অর্থাৎ সে হাদিসটি ফরজ রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নফল রোজার ক্ষেত্রে নয়।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন- নফল রোজা দিনের বেলা নিয়ত করার মাধ্যমে সহিহ হবে। এ বিষয়টি যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী “إني إذاً صائم”দ্বারা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া আরও প্রমাণ করে যে, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি । যেমন ফরজ নামাজ দাড়ানো এবং জমিনে ভালোভাবে স্থির হওয়া ব্যতিত সহিহ হয় না। আর নফল নামাজে এগুলো আবশ্যিক নয় । নফল সালাত বসে ও বাহনের উপর আরোহণ করে উভয় অবস্থায় সহিহ। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ যে তিনি নফলের ব্যাপারটি প্রশস্ত করেছেন। এ কারণে দেখা যায় নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজের তুলনায় আমাদের জন্য অনেকটা শৈথিল্য দেখানো হয়েছে।
নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করার বিষয়টি একাধিক সাহাবি হতে বর্ণিত হয়েছে, যেমন,  আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মুয়াজ বিন জাবাল, হুজাইফা, আবু তালহা, আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. প্রমুখ।

Share this

Related Posts

First